• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষা

প্রাথমিকের শিশুরা টিফিনে পাবে দুধ-ডিম-রুটি-ফল

  • ''
  • প্রকাশিত ২৫ মার্চ ২০২৪

তরিকুল ইসলাম সুমন:

দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকার ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচদিন পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘স্কুল ফিডিং’ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীদের দুধ, ডিম, মৌসুমী ফল, কলা, ফর্টিফাইড বিস্কুট, কেক ও বনরুটি দেওয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ১৫০টি উপজেলার ১৮ থেকে ১৯ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পরবর্তীতে এই বর্মসূচি সারা দেশে বিস্তৃত করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেছেন, আমরা প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেয়েছি। আমরা প্রকল্পে শিশুদের জন্য একদিন ডিম দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করলেও পরিকল্পনা কমিশন থেকে সপ্তাহে দুদিন শিশুদের ডিম দেওয়ার বিষয়ে বলেছে। সেই অনুযায়ী সপ্তাহে দুদিন ডিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই প্রকল্পে বিদেশিদের বিনিয়োগে আগ্রহ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে অনেক শিশুই স্কুল বিমুখ হয়েচিল। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্রপিরীত কিছু এলাকার মিশুদের স্কুলমুখী করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো খাবারে ফল সংযোজন। এলাকাভিত্তিক যখন যে ফল পাওয়া যাবে সেই এলাকায় সেই ফলই দেওয়া হবে।

সচিব আশা করেন দ্রুত সময়ের মধ্যে একনেকে এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতিসম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচদিন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হবে। প্রত্যেক স্কুলে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত টিফিন টাইম চলাকালে শিক্ষার্থীদের মাঝে এসব খাবার বিতরণ করা হবে।

প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর তিন বছরের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৭৫৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন চার হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান হিসেবে আসবে ৬৪ কোটি টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, তিনটি ধাপে পর্যায়ক্রমে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার বিতরণের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সপ্তাহে পাঁচদিন নানা ধরনের খাবার পরিবেশন করা হবে। এরমধ্যে থাকবে দুধ, ডিম, ফর্টিফাইড বিস্কুট, কলা ও মৌসুমী ফল। যেদিন দুধ দেওয়া হবে, দুধের সঙ্গে বনরুটি থাকবে। যেদিন ডিম দেওয়া হবে, ডিমের সঙ্গে কলা এবং ফর্টিফাইড বিস্কুট থাকবে। মৌসুমী ফল দেওয়া হলে সঙ্গে অন্য খাবার থাকবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (ফেইজ-১) প্রকল্পের আওতায় খাদ্যসামগ্রী/স্কুল ফিডিং ক্রয়, পরিবহন ও পরিদর্শন খাতে ব্যয় হবে চার হাজার ১৮১ কোটি টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রকল্পে মোট ২১ হাজার জন টিফিন মিল ম্যানেজার থাকবেন, এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। ভেন্ডর পরিবহন, খাদ্য বিতরণ, গোডাউন, সার্ভিস চার্জ ও প্যাকেজিং খাতে ২৮২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। চার লাখ ২০ হাজার অ্যাপ্রন ও রুমাল কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জুন একনেক সভা থেকে বাতিল করা হয় ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ প্রকল্প। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ছিল ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সব শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে স্কুল মিল কার্যক্রমের আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখা, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্প থেকে খিচুড়ি রান্নার ফরমেট বাতিল করা হয়। তখন একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন খিচুড়ি রান্না করলে বাচ্চাদের পড়ালেখার ক্ষতি হবে। প্রকল্পের ফরমেট পরিবর্তন করে একদিন দুধ, একদিন ডিম ও একদিন বিস্কুটসহ খাবারে বৈচিত্র্য থাকতে হবে। বাচ্চাদের খাবার দেওয়ার জন্য একনেক সভায় ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সভা থেকে খাবারের ফরমেট পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় আমরা ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিফিন টাইমে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার পাবে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হবে অন্যদিকে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার শঙ্কাও থাকবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads